টেকসই উন্নয়নের সম্ভাবনা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ

লেখকঃ কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ
(০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, দৈনিক বাংলা)

আজ ৪ সেপ্টেম্বর। নতুন ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জগতে দৈনিক বাংলা একসময় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে এসেছে। ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার প্রকাশনা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক বাংলা ব্যক্তিমালিকানাধীনে নবরূপে আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশের পর থেকেই পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ এবং মানসম্পন্ন লেখা প্রকাশ করে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে।

সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। দর্পণের সম্মুখে দৃশ্যমান যেকোনো বস্তু যেমন অবিকল প্রতিভাত হয়ে ওঠে সংবাদপত্রের মাধ্যমে সমাজের ভালোমন্দ বাস্তব চিত্র পাঠকের কাছে ফুটে ওঠার কথা। রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা নিযুক্ত থাকেন সংবাদপত্র তাদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে তা শুধরে নেয়ার সুযোগ করে দিতে পারে। তাই সংবাদপত্রকে ‘ফোর্থ স্টেট’ বলা হয়। কোনো সমাজেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্তরা সংবাদপত্রের গঠনমূলক সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে পারেন না। অবশ্যই একটি সংবাদপত্রকে সব সময়ই পাঠকের কথা বিবেচনায় রাখতে হয়। তবে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করা কোনোভাবেই একটি সংবাদপত্রের নিকট থেকে প্রত্যাশা করা যায় না। আমার প্রত্যাশা থাকবে, দৈনিক বাংলা যেন বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে পাঠক চাহিদা পূরণে সচেষ্ট থাকে। আমি যতটুকু জানি দৈনিক বাংলা ইতিমধ্যেই বস্তুনিষ্ঠতার পথ অবলম্বন করে চলেছে।

মাঝে মাঝেই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সংবাদপত্র কীভাবে অবদান রাখতে পারে। এর উত্তরে আমি বলব, সংবাদপত্রে যারা কাজ করেন তারা এই সমাজেরই অংশ। সমাজের ভালোমন্দ অন্য নাগরিকদের মতো তাদেরও প্রভাবিত করে। আমি একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ে চর্চা করি। আমি প্রত্যাশা করব, সমাজ সচেতন একটি জাতীয় পত্রিকা হিসেবে দৈনিক বাংলা দেশের অর্থনীতির সাফল্য-ব্যর্থতার চিত্র নির্মোহভাবে তুলে ধরুক। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নিম্ন-মধ্যমআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরের মধ্যে বিগত একযুগে বাংলাদেশের অর্থনীতি অভূতপূর্ব অর্জনের জন্য দেশে-বিদেশে নন্দিত। একসময় যে বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে কেউ কেউ নানা ধরনের বিরূপ মন্তব্য করতেন সেই বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক নির্ধারিত আগামীর লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ২০৩১ সাল নাগাদ উচ্চ-মধ্যআয়ের দেশ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত স্মার্ট কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা। এ সব লক্ষ্য পূরণে সংবাদপত্র সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। বলা বাহুল্য, দেশের অর্থনীতিও নানা খাতে বিভক্ত। সব খাতের অবস্থা একই রকম নয়। কোনো কোনো খাতে অর্জন অসাধারণ। আবার কোনো কোনো খাতে অর্জন প্রত্যাশা মতো হচ্ছে না। উন্নয়ন টেকসই হতে হলে সব খাতেই সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। সংবাদপত্র এসব বিষয়ে আলোকপাত করতে পারে। একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে দৈনিক বাংলার কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে পত্রিকাটি যেন অর্থনীতির সব খাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন কতটা হয়েছে সেটা নিরূপণ করা। এ ব্যাপারে সংবাদপত্র সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রদান করতে পারে, যাতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লাগসই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ হয়। কোনোভাবেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া উচিত নয়। কারণ ভুল তথ্য প্রদান করলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

একসময় বাংলাদেশ ছিল সর্বতোভাবেই কৃষিপ্রধান এবং কৃষিনির্ভর একটি দেশ। বর্তমানে জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি’র) কৃষির অবদান অনেকটাই কমে গেছে। কিন্তু তারপরও কৃষি এখনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের মতো এখনো সরাসরি কৃষি খাতে কর্মরত। আরও অনেক মানুষ কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে উন্নতি হয়েছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর। স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ ছিল খাদ্যঘাটতির একটি দেশ। সেই সময় জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি। এখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। কিন্তু তার পরও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ যদিও মাঝেমধ্যে ঘাটতি সৃষ্টি করে। স্বাধীনতার পর দেশে চালের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন। এখন চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৫৭ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। যদিও বিগত ৫০ বছরের বেশি সময়ে দেশে কৃষি জমির পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ দ্রুত কৃষি যান্ত্রিকায়নের দিকে ধাবিত হচ্ছে। উন্নত বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দেশের কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক ধরনের বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ক্রপ জোনিংয়ের ওপর জোর দিতে হবে। কোন জমিতে কি ফসল ভালো হবে সেটা জানা থাকলে উৎপাদন নিশ্চয়ই বাড়ে। কৃষি মন্ত্রণালয় ‘সমলয়’ পদ্ধতির কৃষি আবাদব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে। সমলয় পদ্ধতি হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে পরিচালিত সমবায় পদ্ধতির মতোই। এখানে সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত জমিগুলোকে সমবায় ভিত্তিতে চাষের আওতায় আনা হবে। জমির মালিকরা তাদের জমির পরিমাণ অনুযায়ী উৎপাদিত ফসলের অংশ পাবেন। যারা চাষের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন তারাও ন্যায্যভাবে ফসলের অংশ পাবেন। সন্নিহিতভাবে অবস্থিতি জমি একসঙ্গে চাষের আওতায় আনা হলে জমির খণ্ডবিখণ্ডতা যান্ত্রিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। এই পদ্ধতির কৃষিকাজে নিয়ন্ত্রণভার থাকবে অংশী কৃষকদের হাতে।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি এখনো গ্রামীণ অর্থনীতি। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি, সংস্থা (এফএও) দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। চাল উৎপাদনে চীন এবং ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। মাছ, সবজি, ফল ও ফুল উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। মিডিয়া এই বিষয়গুলো আরও ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে পারে। বাংলাদেশের কৃষি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। এ দেশের কৃষকরা সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী। তারা যেকোনো কিছু চেষ্টা করলেই রপ্ত করতে পারে। কৃষকদের যদি আধুনিক যান্ত্রিক ও বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ সম্পর্কে আরও প্রশিক্ষণ দেয়া যায় তা হলে তাদের উৎপাদনশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে কায়িক পরিশ্রম কমে যাবে। তবে যান্ত্রিকীকরণের ফলে কিছু বেকারত্ব সৃষ্টি হতে পারে, হবে। এদিকে আগেভাগে নজর রাখতে হবে এবং প্রয়োজনানুসারে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন অকৃষি খাতের সম্প্রসারণ এ ক্ষেত্রে উপকারে আসবে। বাংলাদেশে কৃষক পরিবারের সন্তান কিছু শিক্ষালাভের পর অনেকে নিজেদের কৃষিকে নিয়োজিত করতে চান না। কারণ প্রচলিত সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য এবং সামাজিক সম্মানের অনুপস্থিতি। কৃষিতে যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেলে এবং সব মানুষ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদা নিশ্চিত হলে কৃষক পরিবারের শিক্ষিত সন্তানরাও কৃষিকাজে যুক্ত হওয়ার জন্য আগ্রহী হতে পারে।

বর্তমানে দেশের অধিকাংশ গ্রামে বিদ্যুৎসহ যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এই অবস্থার সুযোগ কাজে লাগিয়ে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ করা সহজ হচ্ছে। এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, কোনো আন্তর্জাতিক সংকট দেখা দিলে কৃষিপণ্য আমদানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বিপাকে পতিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মতো যেসব দেশ খাদ্য উৎপাদনে সমৃদ্ধ তাদের আন্তর্জাতিক খাদ্যসংকটকালেও তেমন অসুবিধা হয় না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষির পাশাপাশি অকৃষি খাতও এখন সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, শুধু কৃষিপণ্য বিপণন করে এই খাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে না। গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিভিত্তিক অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রশিল্প ও ব্যবসা বিকাশের উদ্যোগ আরও জোরালো করতে হবে। পল্লীকর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) গ্রামীণ অর্থনীতিতে কৃষিনির্ভর ক্ষুদ্রশিল্প ও ব্যবসায় বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। অনেকেই পিকেএসএফ-এর আর্থিক সহায়তায় গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্রশিল্প ও ব্যবসায় স্থাপন করে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তন করেছে। এটা প্রমাণিত যে, প্রচলিত ক্ষুদ্রঋণ টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক নয়। গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনে ‘উপযুক্ত ঋণ’ই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। উপযুক্ত ঋণের মূল কথাই হচ্ছে যার যতটুকু অর্থের প্রয়োজন তাকে ততটুকু আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। এখন পর্যন্ত পিকেএসএফ-এর আওতায় একজনকে যথাযথ প্রকল্প থাকলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়। একই সঙ্গে ঋণগ্রহীতা যাতে ঋণের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার করে সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখা হয়। গ্রামীণ শিল্পে উৎপাদিত পণ্য যাতে উদ্যোক্তারা সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারে, সে ব্যাপারে তাদের প্রয়োজনানুসারে প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য সহায়তা দিতে হবে। উপযুক্ত ঋণ নিয়ে গ্রামাঞ্চলে অনেকেই তাদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে টেকসইভাবে দারিদ্র্য থেকে বের হয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। পিকেএসএফ প্রদত্ত সব ঋণ বিনা জামানতে প্রদান করা হয়। তবে এ খাতে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।

আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক উল্লেখযোগ্যভাবে আমদানি করা কাঁচামালনির্ভর। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশের মতো। আমরা যদি কৃষিনির্ভর শিল্পজাত পণ্য বিদেশে রপ্তানি আরও বাড়াতে চাই তাহলে অবশ্যই এ খাতের আরও অগ্রগতি কাম্য। এ ক্ষেত্রে জাতীয় অর্থনীতিতে অধিক, ক্ষেত্রবিশেষে শতভাগ মূল্যসংযোজন করা সম্ভব। আমাদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। আমাদের দেশের কৃষিসহ অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হচ্ছে। কিন্তু অনেকে এগুলো সম্পর্কে খুব একটা জানে না। এসব অজানা তথ্য এবং উদ্ভাবন বা সাফল্যের কাহিনি পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরা হলে অন্যেরাও অনুপ্রাণিত হবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন খাতের চ্যালেঞ্জগুলো পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে যাতে সেগুলো দূর করে অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত করা যায়।

জলবায়ু ভঙ্গুর এ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব প্রকটভাবে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজানিত কারণে অনেকেই তাদের সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। এদের দুরবস্থার চিত্র পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে। কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা করা যায়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় সে ব্যাপারে তথ্য দিয়ে, পরিত্রাণের উপায় জানিয়ে দিয়ে জনগণকে সহায়তা দেয়া এবং উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। জলবায়ু পরির্বতনের অভিঘাত কোনো কোনো এলাকায় বেশি তা পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করা যেতে পারে। হাওর এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে। উপকূলীয় এলাকায় আবাদি জমিতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে কৃষি জমিকে চাষের অনুপযোগী করে তুলছে। এ থেকে কীভাবে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব এসব বিষয় পত্রিকার মাধ্যমে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গল্প এবং তাদের এগিয়ে চলার প্রকৃত ও সম্ভাব্য পথ পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে। এ কাজ করার জন্য সংবাদপত্রে যারা কাজ করেন তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় দেশ এগিয়ে যাক বর্তমান সরকারের এটাই মূল লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে সমাজের প্রতিটি মানুষ অর্জিত অর্থনৈতিক সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারবে। কিছু মানুষ এগিয়ে গেল আর বিপুলসংখ্যক মানুষ পেছনে পড়ে রইল এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতমুখী ব্যবস্থা। বর্তমান সরকার নীতিগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে শোষণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে মিডিয়া-সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। অর্থনীতির সব খাতের কথাই বলতে হবে, তবে সেসব মানুষের কথা বেশি করে বলতে হবে যাদের কথা বলা হয় না বা কম বলা হয়। তারাই পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, যাদের মুখে বঙ্গবন্ধু হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন।

যারা মিডিয়ায় কাজ করেন তাদের সব সময়ই সচেতন থাকতে হবে, যাতে তাদের দ্বারা এমন বিভ্রান্তিকর কোনো সংবাদ পরিবেশিত না হয়, যা দ্বারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে বা মানুষ আতঙ্কিত হতে পারে। কিছুদিন আগে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, কোনো কোনো সংবাদপত্র বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে যে, দেশে ব্যাংকিং সেক্টর দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আমানতকৃত অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। এই ধরনের সংবাদের কারণে সাধারণ আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে তাদের অর্থ উত্তোলন করতে শুরু করেন। সেই সময় এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছিল, আতঙ্কিত হয়ে গ্রাহকরা ৫০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। ব্যাংকের মতো স্পর্শকাতর একটি খাত নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদের কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা প্রত্যক্ষ করা যায়। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের আগে তার যথার্থ সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এখানেই দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার বিষয়টি এসে যায়। পত্রিকায় পরিবেশিত প্রতিটি সংবাদই সঠিক তথ্যভিত্তিক এবং বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। সংবাদ এলেই তা ছাপিয়ে দিতে হবে, এমন মানসিকতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনো সংবাদ এলে তা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করে প্রকাশ করা ঠিক না।

সব শেষে দৈনিক বাংলার কাছে প্রত্যাশা থাকবে, পত্রিকাটি যেন সব সময় বস্তুনিষ্ঠ এবং সঠিক সংবাদ পরিবেশনে সচেষ্ট থাকে। কাটতি বাড়ানোর জন্য বিভ্রান্তিকর সংবাদ কোনোভাবেই কাম্য নয়। দৈনিক বাংলার আগামীর পথচলা সফল হোক, সুন্দর হোক এই প্রত্যাশা করছি।

Source: https://www.dainikbangla.com.bd/opinion/30335/1693797174

 

About the author