পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শুভ হউক

কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ

সেই কোন্‌ অতীত থেকে পদ্মা নদী বাংলার বুক চিরে বয়ে চলেছে নিরবধি। পদ্মা নদী বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতার অংশ। আর অবশ্য নদীটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির অনিবার্য অনুষঙ্গ।
আমরা জানি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পদ্মা-ভক্ত ছিলেন। পদ্মা তাঁকে দিয়েছিল লেখার অনেক প্রেরণা ও বিষয়বস’। তিনি পদ্মাকে ঘিরে এক সময় ‘ঘর’ বেঁধেছিলেন বলা যায়। এই নদীর বৈচিত্র্যময়তা উৎসারিত বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা সম্বলিত তাঁর কত লেখা আছে আমার জানা নেই। সে বিষয় আমার এই লেখার উপজীব্যও নয়। তবে তাঁর একটি কবিতার কথা উল্লেখ করতে চাই। কবিতাটির শিরোনাম ‘পদ্মায়’। নদীটির বহমানতা ও এর পানির স্বচ্ছতা এবং নদীটিকে ঘিরে মানুষ, পাখি, ইলিশমাছ এবং অন্যান্য জীবের প্রাণচঞ্চল বসবাস বা আনাগোনা, নৌকা চলাচল, পদ্মা-পারের হাটবাজার এবং পদ্মার ওপর মেঘের গুরুগুরু ডাকসহ অন্যান্য অনেক বিষয় তাঁর এই কবিতায় অসাধারণভাবে মূর্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর নিজের পদ্মা-প্রীতির বিষয়ও উঠে এসেছে কবিতাটির প্রথম লাইনেই: ‘আমার নৌকো বাঁধা ছিল পদ্মা নদীর পারে।’
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পদ্মার ঢেউয়ের কাছে ‘বঁধূয়ার’ সঙ্গে প্রেম-বিবাহের কথা জানিয়েছেন তাঁর কালজয়ী গানে:
“পদ্মার ঢেউ রে ̶
মোর শুন্য হৃদয়-পদ্ম নিয়ে যা, যা রে
এই পদ্মে ছিল রে যার রাঙা পা
আমি হারায়েছি তারে॥
……..
……..
যদি দেখিস তারে, দিস এই পদ্ম তার পায়
বলিস, কেন বুকে আশার দেয়ালি জ্বালিয়ে
ফেলে গেল চির-অন্ধকারে”।

পদ্মা নদীর মাঝির কথা নানাভাবে বিভিন্ন জন বর্ণনা করেছেন। এখানে স্মরণে আনতে চাই, মানিক বন্ধোপাধ্যায়ের উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝি। এই উপন্যাসের উপজীব্য জেলে ও মাঝিদের জীবনচিত্র। তাদের জীবনের বাস্তবতা, সুখ-দুঃখসহ বিভিন্ন দিক পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে তাঁর বর্ননায়।
অন্নদাশংকর রায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও কৃতিত্বের স’ায়িত্ব পদ্মার বহমানতার নিরিখে দেখেছেন। তিনি লিখেছেন:
‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরি যমুনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’

কাজেই পদ্মা নদী বাংলার ভৌগোলিক-প্রাকৃতিক গঠনে ও বাঙালির জীবনে ও মননে স’ায়ী আসন দখল করে আছে সেকাল-একাল সবকালে। এই নদী পারাপারের মাধ্যম এ যাবৎ ছিল নৌকা, ট্রলার, স্পীডবোট, ফেরি ইত্যাদি। এসকল যানে একপারে উঠা এবং অপর পারে নামা অনেক সময় অসহনীয় সময়সাপেক্ষ এবং কষ্টদায়ক। বিশেষ করে উল্লেখ্য, নৌকা ও স্পীড বোট পদ্মার ঢেউ-এ ভীতিকরভাবে আছাড় খেতে থাকে। আমি ব্যক্তিগতভাবে স্পীড বোটে পদ্মা পার হতে এরকম পরিসি’তির মুখোমুখি হয়েছি। ভয়ও পেয়েছি। আর ফেরিতে মটরগাড়ী, বাস, ট্রাক ও অন্যান্য যান-এর পারাপারে নানা হাঙ্গামা ও দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। পণ্য পরিবহনে অধিক সময় ব্যয় হওয়া বাজার ব্যবস’ায় একটি বড় রকমের অসংলগ্নতা সৃষ্টি করে। শাক-সবজি পঁচে যেতে পারে অথবা মানসম্পন্ন থাকে না।
পদ্মার কারণে ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত বাংলাদেশের মানুষ এরকম নানা সমস্যায় জর্জরিত থেকেছে এযাবৎ। সহজ যোগাযোগের মাধ্যমে সারাদেশকে যাতে সংযুক্ত করা যায় সেজন্য পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নিঃসন্দেহে এই সেতু দেশের যোগাযোগ ব্যবস’ায় যুগান্তকারী অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করবে। মংলা সমুদ্র বন্দরের ব্যবহার বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। বস’ত, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে সুসংহত ও ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে এই সেতু উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি সেতুটি নদীটির উপর্যুক্ত এবং অন্যান্য উপযোগিতায় কোনো ঘাটতির কারণ হবে না, বরং নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ফলে সেই উপযোগিতাগুলো আরো সমুন্নত হবে বলে ধারণা করা যায়।
বাংলাদেশ একটি খুবই ঘন বসতিপূর্ণ দেশ। ২০১৯ সালের তথ্যমতে এদেশ প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,১২৫ জনের বাস। এর গভীরতা অনুধাবন করার জন্য অন্য কয়েকটি দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব উল্লেখ করা যায়। প্রায় একই সময়ে এই সংখ্যা ভারতে ৪৬৪ জন, পাকিস্তানে ২৮৭ জন, চীনে ১৫০ জন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৬ জন, রাশিয়া ৯ জন। নিশ্চয়ই উন্নয়ন অর্জনের পথে জনসংখ্যার বিশালত্ব একটি প্রতিবন্ধকতা। তবে বাংলাদেশের সামনে জনমিতিক সুযোগও রয়েছে, যেহেতু তরুণ প্রজন্ম দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ। এদের শক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা গেলে, দেশের অগ্রগতিতে আরো গতি আসবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আবার পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রে বৃহৎ জনসংখ্যা ও উঁচু মাত্রার ঘনবসতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
জনসংখ্যার আধিক্য থাকায় এবং যেহেতু পদ্মাসেতু দেশের সব অঞ্চলের মধ্যে সহজ-যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করবে, তাই এই সেতুর ব্যবহার উঁচু মাত্রায় ঘটবে। অসংখ্য মটরগাড়ী, বাস, ট্রাক এবং অন্যান্য যান উভয় অভিমুখে চলাচল করবে। এর একটা দিক হচ্ছে যে, পদ্মাসেতু নির্মাণের খরচ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে উঠে আসবে বলে ধরে নেয়া যায়। বস’ত উন্নয়ন উপকরণ ও উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর পরিবহন পদ্মার দুই পারের সংলগ্ন অঞ্চলের মধ্যেই নয়, বরং এগুলো দেশের যে কোনো স’ান থেকে যে কোনো স’ানে আনা-নেয়া সহজতর এবং অপেক্ষাকৃত কম খরচ ও সময়সাপেক্ষ হবে। তাই এই সেতু দেশের আঞ্চলিক এবং সার্বিক উন্নয়নে প্রভুত ভূমিকা রাখবে। সুফল যথাযথভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতে পৌঁছাতে পারে সেজন্য দেশের সর্বত্র নির্বিঘ্নে মালামাল পরিবহনের অবকাঠামো ও আবহ তৈরি করতে হবে। এছাড়া এই সেতুর কারণে দেশের যে কোনো স’ান থেকে প্রতিবেশী এবং অন্যান্য দেশে যাতায়াত এবং তাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা সহজতর হবে। এসবই দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে অবদান রাখবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছে, পদ্মাসেতুর দুই দিকেই সংলগ্ন এলাকায় অনেক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গড়ে উঠবে বলে ধরে নেয়া যায়। প্রাথমিক অবস’ায় এগুলো অতিক্ষুদ্র বা ক্ষুদ্র হতে পারে; সেবাধর্মী এবং উৎপাদনমুখী হতে পরে। যেমন হোটেল, রেষ্টুরেন্ট, গাড়ী মেরামত, মোবাইল মেরামত, আকর্ষণীয় পোষাক এবং ঘর বা অফিস সাজানোর পণ্য সামগ্রীর কারখানা ও দোকানপাট গড়ে উঠতে পারে।
হোটেল, রেষ্টুরেন্ট কিছু কিছু ব্যবসা ইতোমধ্যে গড়ে উঠতে শুরু করেছে। পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে অনেক দর্শনার্থীর ব্যাপক আনাগোনা নিশ্চয়ই ঘটবে। তাই পর্যটন শিল্পের এক ব্যাপক সম্ভাবনার ঠিকানা উন্মোচিত হবে বলে ধারণা করা যায়। আগে থেকে কোথায় কিভাবে কোন পণ্য বা সেবার জন্য উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে তা নির্ধারণ করে দিলে আগ্রহী উদ্যোক্তারা পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগগুলো গ্রহণ করতে পারবে। আর অবশ্য তাদের যে ধরনের সেবা (বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য সেবা, অবকাঠামো) লাগবে সেগুলোর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আশ-পাশের এলাকাগুলোর দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষদের উৎসাহিত করা হলে তা উন্নয়নে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
কী উন্নত, কী উন্নয়নশীল সকল দেশেই যোগাযোগ এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশের পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রে যে বিশ্লেষণ আমি উপরে দেয়ার চেষ্টা করেছি তার ভিত্তিতে বলা যায় যে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই সেতুর কারণে জাতীয় উৎপাদে (এউচ) বৃদ্ধি প্রাক্কলিত এক শতাংশের মত থেকে অনেক বেশি হবে, দুই শতাংশ বা ততোধিক হতে পারে। এছাড়া পদ্মাসেতু দেশের সংস্কৃতি বিকাশেও যোগাযোগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে অবদান রাখতে পারে। অবশ্যই বাঙালির চিরায়ত বৈশিষ্ট্যসমূহ বজায় রেখেই আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ কাম্য।
পদ্মাসেতুর জন্য প্রথমে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সঙ্গে ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির কথিত অভিযোগ এনে পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন করবে না বলে ২০১২ সালের জুন মাসে জানায়। সহযোগী অন্যান্য সংস’াও এই প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যায়। কানাডার একটি আদালত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে ঘোষণা করে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ বিজয়ী হয়ে মাথা আরো উঁচু করে দাঁড়ায়।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাবার কথা বলার স্বল্প সময় পরই ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন বাংলাদেশ নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরী করবে। আজ সেই সেতু বাস্তব সত্য। যেদিন শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করার ঘোষণা দেন, সেদিন সারা বিশ্বে এই বার্তা চলে যায় যে, বাংলাদেশকে আর খেয়ালখুশীমত খেলানো যাবে না। আর বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কানাডার কোর্টের রায়ের পর বাংলাদেশের অবস’ান আরো দৃঢ় হয়।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে স্বকীয়ভাবে, নিজেদের চিন্তা-ভাবনায়, বাস্তবতার নিজস্ব মূল্যায়নে এবং নিজস্ব পরিকল্পনা ও কর্মসূচি অনুযায়ী। সেই আঙ্গিকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতেই পারে প্রয়োজনে, তবে চাপিয়ে দেয়া কোনো চিন্তাভাবনা ও শর্ত গ্রহণ করে নয়। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের অবস’ান এখন অনেক মর্যাদার এবং সম্মানের। তা আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে বাংলাদেশকে আগামীতে সচেষ্ট থাকতে হবে।
এই লেখার শুরুর দিকে উদ্ধৃতিগুলো বিভিন্ন বিষয় থেকে দেখা যায় যে, নিজেদের মত করে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল তাঁদের কবিসত্তার অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে পদ্মাকে দেখেছেন এবং তাঁদের অভিব্যক্তি ও বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই নদীকে কেন্দ্র করে যাদের জীবন-যাপন তাদের জীবনগাথা তুলে এনেছেন উপন্যাসিকের দৃষ্টিকোণ থেকে। অন্নদাশংকর রায় এই নদী ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে ঘিরে একটি অসাধারণ উক্তি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সময়ে তার জননেতৃত্বের দূরদর্শিতায় পদ্মার উপর সেতু নির্মাণের ব্যবস’া করে এই নদী যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশকে যে বিভক্ত করে রেখেছিল তা দূর করে দেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতির সুযোগের অভূতপূর্ব সম্প্রসারণ ঘটিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাংলার পদ্মা আর পদ্মার বাংলা আরো ঘনিষ্ঠভাবে মূর্ত হলো।
এই বৃহৎ প্রকল্প অর্থাৎ পদ্মাসেতু নির্মাণে নিজস্ব অর্থায়ন এবং বাস্তবায়ন করার পথে কারিগরি, অর্থায়ন এবং ব্যবস’াপনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রমের সমন্বয় ইত্যাদি বিষয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। এরকম অভিজ্ঞতা আগামীতে অধিকতর দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কাজে লাগবে। বিশেষ করে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও অর্থায়নের প্রাক্কলন সঠিকভাবে করার ক্ষেত্রে।
সেতুটি বাংলাদেশের শুধু এক গৌরবোজ্জ্বল অর্জনই নয়, বিশ্বপরিমন্ডলে বাঙালির মর্যাদারও প্রতীক এবং একই সাথে এটি দেশের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। সাড়াজাগানো পদ্মাসেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫শে জুন ২০২২ উদ্বোধন করবেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের তিনি স্বপ্নদ্রষ্টা এবং তারই নেতৃত্বে এটি বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। জাতি তার কাছে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমার প্রত্যাশা এই যে, বর্তমান দশক শেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়ন এবং উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে আগামী বছরগুলোতে দেশটি দৃপ্তপদে এগিয়ে যাবে।
এই লেখা শেষ করার আগে পদ্মাকে ঘিরে অন্য একটি বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। সারা বছর ধরে প্রমত্তা পদ্মার অতীতের সেই রূপ এখন আর নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ে বরফ কমে যাওয়ায় (যা শুষ্ক মৌসুমে এই নদীর পানি প্রবাহের মূল উৎস) এবং উজানে পদ্মার উপনদীগুলো থেকে ব্যাপক পানি উত্তোলনের কারণে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা বাংলাদেশে একটি সাধারণ নদীতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। অনেক স’ানে একটি খালের পর্যায়ে নেমে যায়। ফলে বাংলাদেশে, বিশেষত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তীব্র পানি সংকটে পড়ে। বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত সুন্দরবন মিঠা পানির সংকটে ক্রমান্বয়ে অধিকতর ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। এই নদীর পানি বন্টনে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তি আছে তাও ২০২৬ সালে শেষ হবে। তদুপরি বন্টন করার মত পানির পরিমাণ কমেই চলেছে, উপর্যুক্ত দু’টি কারণে। ঐতিহ্যবাহী এই নদী-নির্ভর বাংলাদেশের ব্যাপক এলাকা ও জনপদকে রক্ষা করার লক্ষ্যে মানবতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও বাংলাদেশকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ সব সময়ই সচেষ্ট, কিন’ ভারত উজানের দেশ হওয়ায় সেখানে আগ্রহের বিশদ ঘাটতি সব সময়ই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। তারপরও বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে আরো প্রকট হতে থাকা এই সমস্যা সমাধানে আমাদেরকে আরো সচেষ্ট হতে হবে। বিশেষ করে ২০২৬ সালের পরবর্তী সময়ে ফারাক্কায় পদ্মার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি এবং প্রাপ্ত পানির ন্যায্য বন্টনের বিষয়ে এখন থেকে আরো জোরদার প্রচেষ্টা চালানো খুবই জরুরী।
শেষ করি এই বলে, আমাদের গৌরবের পদ্মাসেতুর উদ্বোধন শুভ হউক। বিশ্বপরিমন্ডলে বাংলাদেশের এবং বাংলার মানুষের মর্যাদা উত্তরোত্তর আরো সমুন্নত হউক।

পাদটিকা
1. The world Bank/Data-Population Density per sq.km of land area (FAO and World Bank population estimates) 2020, <http://data.worldbank.org/indicator/EN.POP DHST? Location =CN>
2. World Bank Statement on Padma Bridge, Press Release, June 29,2012 <Error! Hyperlink reference not valid.>
3. Canada Court finds no proof of Padma Bridge bribery conspiracy , The Daily Star, Dhaka, 11 February 2017.
4. PM lays out plan in JS: ‘Padma bridge with own funds’, The Daily Star, Dhaka, 9 July 2012.

ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ: মুক্তিযোদ্ধা, অর্থনীতিবিদ, সমাজচিন্তক এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্ত।

News link: https://epaper.dhakatimes24.com/?date=2022-06-25

About the author