প্যারিস জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে ডঃ খলীকুজ্জামান (দৈনিক ইত্তেফাক)

cop21-qkahmad
ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, মাননীয় মন্ত্রী এবং দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশক তারিন হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনেটর কোরি বুকারস, সিনেটর আল ফ্রানকেন, সিনেটর টম উদাল এবং সিনেটর জেফ মারকলে।

নিউজ শিরোনামঃ আইনি বাধ্যবাধকতা চুক্তির জন্য ঢাকা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। (সোর্সঃ দৈনিক ইত্তেফাক। ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫)
প্যারিস জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে একটি আইনী বাধ্যবাধকতা চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। গতকাল প্যারিসে বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সাথে ওই দুই দেশের প্রতিনিধিদের আলাদা আলাদা সাক্ষাতে তারা এমন মন্তব্য করেন।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়া উচিত। কারণ দেশটির জনগণ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নিজেদের সক্ষমতা অর্জন করার জন্য তারা বাংলাদেশের জনগণকে সাধুবাদ জানান। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলকে ধন্যবাদ জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিনেটর কোরি বুকারস, সিনেটর আল ফ্রানকেন, সিনেটর টম উদাল এবং সিনেটর জেফ মারকলে। এসময় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামলাউদ্দিন আহমেদ এবং প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ এবং দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশক এবং কার্যনির্বাহী পরিচালক তারিন হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে প্যারিসে পরিবেশ ও বন মন্ত্রীর সাথে আলাদা বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ব্রউনি। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে যুক্তরাজ্য সবসময় বাংলাদেশকে সমর্থন করে যাবে। বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্য দীর্ঘদিনের বন্ধু উল্লেখ করে ব্রউনি বলেন, ‘প্যারিসে একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তি পাস করতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তির ব্যাপারে প্রবল আশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের সদস্যরা। তারা বলছেন, আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তি না হলেও বিভিন্ন দেশ দূষণ কমানোর ব্যাপারে তাদের অবস্থানপত্রে যে অঙ্গীকার করেছে তা মেনে চলতে জোর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ড. কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, আইনগত বাধ্যবাধকতা চুক্তি হচ্ছে না এটি পরিষ্কার। এ সম্মেলন থেকে কি ফল বেরিয়ে আসবে তার জন্য আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ জলবায়ু তহবিলের অর্থায়নের প্রক্রিয়া কি হবে তার ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে এ তহবিলের অর্থ ঋণ হিসেবে না নিয়ে অনুদান হিসেবে নেয়ার ব্যাপারে আমাদের কণ্ঠ জোরালো থাকবে।

এবারের সম্মেলনের অন্যতম আরেকটি দিক গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের একশ’ বিলিয়ন ডলার তহবিলের অর্থ ঋণ না ক্ষতিপূরণ— তা নিয়ে ধনী ও গরিব দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একশ’ বিলিয়ন ডলার ঋণ হিসেবে দেয়া হলে তা অনুদান হবে না বরং তা হবে বিনিয়োগ। এটি অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বিরাট বোঝা হবে। অথচ এ দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মোটেও দায়ী নয়। জিসিএফ তহবিলে ফ্রান্স, রাশিয়া, কানাডা, ব্রাজিল, চীন, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ ৩৭টি দেশ অর্থ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। জিসিএফ তহবিলে ইতিমধ্যে ১০ বিলিয়ন ডলার জমাও পড়েছে। জমাকৃত এ অর্থের ৫২ শতাংশ বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা হয়েছে। এ ফান্ডকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে দেখছে এসব প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে জার্মানি ও রাশিয়া সবুজ জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলছে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে আলোচনায় গতি আনতে আজ বিরতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর থেকে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা আসতে শুরু করেছেন। গতকাল পর্যন্ত ১২৯ দেশের মন্ত্রী সম্মেলনে এসে পৌঁছেছেন।

লিংকঃ http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2015/12/06/87907.html

About the author

Comments

Comments are closed.